ছোট গল্প : বোনের অকৃত্রিম ভালবাসা।
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ৩১ মে, ২০১৪, ০৭:২৩:৫০ সন্ধ্যা
মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে তমাল। দেশী মুরগীর মাংস। মাঝে মাঝে দুই একটা ঢেকুর তুলছে। তৃপ্তির ঢেকুর। উপরের ফ্যানটা ঘুরেই যাচ্ছে একটানা। খটখট করে। সারাদিনের ক্লান্তি শ্রান্তি যেন এক নিমিষেই গায়েব।
সে এখন তার বোনের বাড়িতে। ছোট বোন। অনেক দিন পর দেখা হল তার সাথে। আসার পথে কিযে কষ্ট হয়েছে !
বোনের বাড়িতে যাওয়ার দুইটা রাস্তা। একটা, বাসস্টান্ডে গিয়ে বাসে উঠে সোজা চলে যাওয়া। কোন ঝক্কি ঝামেলা নাই। কিন্তু সময় লাগে অনেক। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মত। আরেকটা, অটোরিক্সায় করে ঘাটে যাওয়া। সেখান থেকে নৌকায় নদী পাড় হওয়া। তারপর বিশাল চড়। সেখানে মোটরসাইকেল সারভিস আছে। উঠলে একদম বড় রাস্তায় নামায় দিবে। অনেক ঝক্কি ঝামেলা। কিন্তু সময় কম লাগে।
তমাল সিদ্ধান্ত নিল দ্বিতীয় পথেই যাবে। তাছাড়া অনেকদিন থেকে নদী দেখা হয় না। নৌকায় ওঠা হয় না। এই সুযোগ কোন ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটল মোটরসাইকেলে ওঠার সময়। পিঠে অনেক বড় সাইজের একটা ব্যাগ। দুই হাতে দুইটা টিফিন ক্যারিয়ার। সবগুলোই কানায় কানায় পূর্ণ।
মায়ের উপর ভিষণ রাগ হচ্ছে তার। আসার সময় হাতের কাছে যা পেয়েছে সব দিয়েছে। বলছিল, বোনের বাড়িতে যাচ্ছিস এত কিছু নিয়ে না গেলে হবে । তখন তো খুশি মনে সব নিয়ে নিয়েছিল। আর এখন ব্যাথায় টনটন করছে হাত দুটো। মনে হচ্ছে কখন যে কনুই থেকে নিচেরটা ছিড়ে পড়ে যায়।
........................................
বিয়ের দিনটার কথা মনে পড়ছে তমালের। সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিল। মাথায় দায়িত্বের বোঝা। বাবা বেচে নেই। তাই সব কিছু তাকেই দেখতে হচ্ছে।
একেবারে শেষ মুহুর্তে হুশ হল তার। 'আরে এই বিয়েটা হয়ে গেল তো বোনটা আর এই বাড়িতে থাকবে না। ঈদে বাড়িতে আসলে তাকে আর দেখতে পাবে না । টিভির রিমোট নিয়ে আর কোনদিন কাড়াকাড়ি হবে না । দুষ্টামি হবে না। ' আর নিজেকে সামলাতে পারল না তমাল। ঝরঝর করে কেদে ফেলল।
এমনেতেই অনেকটা চাপা আর শক্ত স্বভাবের সে। তাই সেদিনের কান্না দেখে অবাক হয়েছিল সবাই।
কত দুষ্টামি করত যে ছোট বোনটার সাথে তার ইয়ত্তা নাই। বিকৃত নামে ডাকা, সারাদিন মাথায় চাটি মারা। আর ভ্যা ভ্যা করে কান্না। সবকিছুই মনে আছে তমালের।
একদিন তো দাদি ডেকে বলল, 'বোনটাকে যে এত বিরক্ত করিস, বিয়ের পর দেখবি তোকে দেশী মুরগী জবাই করে খাওয়াবে। তাই এখন থেকে একটু আদর যত্ন কর। '
সেদিনের দাদির ভবিষ্যৎ বাণী কিভাবে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল ভেবে পায় না তমাল।
-ভাত আর একটু দেব.?
বোনের ডাকে চমকে ওঠে তমাল।
- না, লাগবে না।
সেই তখন থেকে পাশে বসে বাতাস করে যাচ্ছে মেয়েটা।
- উপরে তো ফ্যান ঘুরছে। বাতাস করার কি দরকার.?
- দরকার আছে।
- কি দরকার আছে ?
- আছে, তুই বুঝবি না।
আসলেই তমাল বুঝে না। এর নামই বুঝি ভালবাসা। বোনের অকৃত্রিম ভালবাসা।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৭১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
সত্যিই ভালো লাগলো ভালো লাগলো ভালো লাগলো ভালো লাগলো ভালো লাগলো ভালো লাগলো ভালো লাগলো
শুভ কামনা রইল। এগিয়ে যান।
সিনেমাট্যিক আবহ।
ঠুনকো আবেগ।
.
.
.
নতুন সূর্যের পূর্বাভাস..........
মন্তব্য করতে লগইন করুন